:

সরকার প্রধান হওয়ার খবর যেভাবে জেনেছিলেন ড. ইউনূস

top-news

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যদিও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সময় ড. ইউনূস দেশের বাইরে ছিলেন।

বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ নিয়ে বিরোধী মহলের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হয়। ড. ইউনূস কি এ পদ গ্রহণের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন বা আদৌ এ পদে বসতে রাজি ছিলেন? বিষয়টি খোলাসা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের সঙ্গে একটি কথোপকথনে। সেই কথোপকথনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময় ফ্রান্সের প্যারিসে একটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। তখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পাওয়া, ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ ও সেই সময় তার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন ড. ইউনূস। সরকার প্রধান হওয়ার খবরটি তিনি কীভাবে জানলেন সে কথাও তুলে ধরেন।

সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরকালে ফিন্যানশিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেন ড. ইউনূস। ‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্ট অনুষ্ঠানে কথোপকথন লিখিত আকারে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।”

কারা ফোন করেছিল, জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস কাউকে চেনেন না বলে জানান। বলেন, “আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাঁদের খুঁজে নাও।

“তারা বলছিল, ‘না, না, না, আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি’। আমি বলেছিলাম, জোরালো চেষ্টা করো। তারা বলল, ‘আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।’ তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।” বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, “তারা (ছাত্রনেতারা) আমাকে আবারও ফোন করল। বলল, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে।’ শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছো, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।”

সেই দিনটির কথা বর্ণনা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, ‘আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমরা এটা জানতাম না।’ আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, ‘সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।”

অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, এরও ঘণ্টা দুয়েক পর ওই বোর্ড সদস্যরাসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তাঁরা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন সরকার প্রধান হিসেবে তাকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তখন হাসপাতালের পরিচালককে বলেন, “ওরা (শিক্ষার্থীরা) আমাকে চাইছে। দেশে যেতে বলছে। ভ্রমণের জন্য আপনি কি আমাকে প্রস্তুত করে দিতে পারেন? তিনি বললেন, ‘অবশ্যই, আপনার কথা আমাদের মানতে হবে। আপনি একজন প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেব। প্রয়োজনীয় ওষুধসহ সব কিছু দেব। সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকব।”

এর কয়েক ঘণ্টা পর ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল ড. ইউনূসকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে আসে।

https://demo.therevoltnews.net/public/frontend/img/header-adds/adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *