পানছড়িতে অধিক টাকা ছাড়া মেলে না বিদ্যুৎ সংযোগ

- মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি খাগড়াছড়ি
- 01 Feb, 2025
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মানুষের মুখে মুখে। টাকা হলেই মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ, ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক খুঁটি।
সরেজমিনে শুক্র-শনিবার দুইদিন পানছড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় লোগাং, দুধকছড়া, তারাবন, চেঙ্গী, লতিবান, অক্ষয় পাড়া, পাইয়্যংপাড়া, মরাটিলা, তাইন্দং, তানৈক্যপাড়া, নোয়াপাড়া সহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিটার না দেখে রিডিংয়ের অতিরিক্ত বিল, নতুন সংযোগে অতিরিক্ত টাকা, অবৈধ সংযোগ, আবাসিক প্রকৌশলীর নিজস্ব বাহিনীর হুমকি দমকি সহ গ্রাহকদের নানা ভোগান্তির কথা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ,তানৈক্য পাড়ায় গত এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সংযোগ গ্রহনকারী কবির আহাম্মদ, ছায়েদ আলী, এমরান সহ ৬/৭ জনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, বৈদ্যুতিক তার আনুষাঙ্গিক মালামাল গ্রাহক কিনে দেয়। কাজের শ্রমিক খরচ ছাড়াও শুধু সরকারী পোষ্ট পেইড কার্ড মিটার, সংযোগ আবেদন , ইস্টিমিট জমা বাবদ নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা। সিঙ্গেল ২৫/ ৫০ KV টান্সফরমার বসিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর এসব কাজে সহযোগিতা করেন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলীর মনোনীত ব্যক্তি আইনুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, আবুল হোসেন, আব্বাস উদ্দিন ভালু সহ বেশ কয়েকজন। জানা যায়, সাবেক নির্বাহি প্রকৌশলী স্বাগত সরকার ও ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলী চঞ্চল চৌধুরী কর্তৃক এলাকা ভিত্তিক তাদের দায়িত্ব দেয়া আছে।
বৈদ্যুতিক নতুন সিঙ্গেল ট্রান্সফরমার লাগানো হয় নোয়াপাড়া, মরাটিলা, পাইয়্যংপাড়া, লোগাং, চেঙ্গী এলাকার। সেখানকার বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, নিজ এলাকার দিয়ে ১১ হাজার লাইন থাকলেও ছিলো না ২২০ বিদ্যুৎ সংযোগ। দীর্ঘদিন যাবৎ বারবার আবাসিক ও নির্বাহি প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেও ট্রান্সফরমার ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনা। পরে প্রথমে ২ লাখ টাকা চায়, দর কষাকষিতে লাখ টাকায় নামে। হঠাৎ গত ১৫ দিন আগে পানছড়ির চঞ্চল বাবু লোক পাঠিয়ে টাকা নেয়। তাড়াহুড়ো করে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার লাগিয়ে দেয়।
স্থানীয় রুমন, শান্তি বিকাশ চাকমা, ময়নাল হোসেন সহ অগনিত গ্রাহকের অভিযোগ, মিটার রিডিং অনুযায়ী বিল তৈরি হয় না, মনগড়া বিল তৈরি করে । অভিযোগ করলে পরবর্তী মাসে ঠিক করে দেওয়া হবে বলে। অপর দিকে কার্ড মিটারে ইন্টারনেট সমস্যা হলে টাকা নেওয়া মাঝে মাঝে কঠিন হয়ে পরে। তখন বিপাকে পরতে হয়।
ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকৌশলী চঞ্চল চৌধুরীর কাছে নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কি ভাবে করতে হয় এবং কত টাকা খরচ হয় জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, আবেদন ফি ১৩৮ টাকা সহ ইস্টিমিট খরচ ১ হাজার থেকে ১১ শত টাকা জমা দিতে হয় । নতুন গ্রাহকগনকে সরকারী মিটার দেওয়া হয় না। গ্রাহক বাজার থেকে পাঁচ/ ছয় হাজার টাকায় মিটার কিনে নিলে তা অফিসের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হয়। অপরদিকে নতুন গ্রাহকের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ও সিঙ্গেল ফেজ ২৫/৫০ kv ট্রান্সফরমার বসাতে ৮০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে, সরাসরি অস্বীকার করেন। পরক্ষণেই উনার পোষ্য ক্যাডার ও কাজের সহযোগী "আব্বাস উদ্দিন ভালু"কে পাঠিয়ে এগুলো সাবেক নির্বাহি প্রকৌশলী স্বাগত সরকারের সময় সরকারি কাজ করিয়েছে বলে জানান। তখন প্রকৌশলী একমাস আগে চলে গেছেন বলায়, সমঝোতায় আসার প্রস্তাব করে। সংবাদকর্মীগন নিউজের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বললে, সে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ উপজেলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা সেচ কমিটির সাথে পরামর্শ করে ইরিগেশান পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা। তা না করেই মাত্রাতিরিক্ত টাকা নিয়ে ইচ্ছেমত বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করে দিচ্ছেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তাগণ।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বিতরণ বিভাগ,খাগড়াছড়ি 'র প্রকৌশলী ফয়জুল আলীম আলো বলেন, তিনি একমাস হয় খাগড়াছড়িতে নতুন জয়েন্ট করেছেন। দুর্গম পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত্যাঞ্চলে সকল অনিয়মের তথ্য সে পায় না। তিনি জানান, তিনি আসার পর সকল স্টাফদের কোন প্রকার কাজে ফাঁকি ও অনিয়ম না করার নির্দেশ দেন। সে আসার পর নতুন কোন বৈদ্যুতিক টান্সফরমার বসানো হয় নি। শুধু মাত্র পুরাতন গ্রাহকগন মিটার পরিবর্তনের জন্য ফ্রি ভাবে বিউবো'র মিটার পাবেন। কোন নতুন সংযোগে বিউবো-র মিটার দেওয়া হয় না। কোথাও এমন হয়ে থাকলে তা অনিয়মের মধ্যে হয়েছে। আপনি আমাকে তথ্য দেন ব্যবস্থা নিচ্ছি।
পানছড়ি উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঠিক তদাবকির অভাবে দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তারা সুযোগ পাচ্ছে। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *